ছাত্রাবস্থায় চাকরি করার অনেক সুযোগ আছে অনলাইনে। পড়াশুনা চলাকালীন অবস্থায় যে সময়টুকু পাওয়া যায়, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আপনি ঘরে বসে আয় করতে পারেন। এমন অনেক কোম্পানী রয়েছে যারা ছাত্র-ছাত্রীদের খুঁজে বেড়ায় চাকরি দেয়ার জন্য। খরচ বাঁচাতে তারা প্রপেশনালদের চেয়ে আনাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদেরই প্রাধান্য দিয়ে থাকে তাদের কাজ বা চাকরি করার জন্য।
এগুলো এমন চাকরি যা আপনার পড়াশুনায় কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। দেখুন তাহলে কী ধরণের চাকরি রয়েছে যা আপনি পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে করতে পারেন- ছাত্রাবস্থায় চাকরি করে আপনি আপনার পড়াশুনার খরচ তুলে আনতে পারবেন অনায়াসে। এমনকি, আপনার ফ্যামিলিকেও নানাভাবে আর্থিক সহযোগীতা করতে পারবেন। নিচে বেশ কিছু চাকরির ধরণ উল্লেখ করা হল যা বিশ্ব জুড়ে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পড়াশুনার পাশাপাশি করে থাকে।
আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ, ভারতের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই অনলাইন জুড়ে এ-সব চাকরি করে নিজেদের পড়া-শুনার খরচ নিজেরাই বহন করে থাকে। আপনিও বেছে নিতে পারেন এমন যে কোন চাকরি। ছাত্রাবস্থায় আয় করার জন্যে আসলেই অনেক সুযোগ আছে। আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে অ্যাকাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করার জন্যে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে অনলাইনে করার মতো প্রচুর কাজ রয়েছে। তার মাঝে ৫টি কাজ নিয়ে আজ আলোচনা করবো যেগুলো পড়াশুনা চলাকালীণ অনায়াসেই করা যায়।
১. আর্টিকেল রাইটিং – ব্লগ পোস্ট, প্রোডাক্ট রিভিউ: যে কোন নির্দিষ্ট টপিকের উপর যদি আপনার লেখার যোগ্যতা থাকে, তাহলে আপনি অনেক কোম্পানী এবং অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য লেখা-লেখির চাকরি নিতে পারেন। ছাত্রাবস্থায় লেখালেখিটাই সবচেয়ে সহজ এবং ভাল ইনকামের রাস্তা। এখানে, আপনাকে আপনার ক্লায়েন্টের ব্লগ, ওয়েবসাইট কিংবা মার্কেটিং এর জন্য আর্টিকেল লিখতে হবে।
লেখা শেষ হওয়ার পর পরই আপনি আপনার পেমেন্ট পেয়ে যাবেন। পেমেন্ট হতে পারে প্রতি শব্দ বা প্রতি প্রজেক্টের উপর ভিত্তি করে অথবা ঘন্টা হিসেবে। সাধারণত, আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটগুলো ঘন্টা হিসেবে পে করে থাকে। এগুলোর বাইরে কিছু নিউজ পেপার এবং অনলাইন ম্যাগাজিন রয়েছে যেগুলো প্রতিটি লেখার জন্যে একটা নির্দিষ্ট্য অ্যামাউন্ট পে করে থাকে।
এমন কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে আর্টিকেল লিখে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা আয় করা যায়। আপনি চাইলে এই সাইটগুলোতে লিখতে পারেন। তবে, এদের রিকোয়্যারমেন্ট ফুলফিল করা একটু কঠিন। বিশেষ করে, পেমেন্ট অপশন। অধিকাংশেরই পেমেন্ট অপশন পে-পাল যা আমাদের দেশে এখনো পুরোপুরি অ্যাভেইলেবল নয়।
তবে, আপনার কোন বন্ধু-বান্ধব কিংবা ঘনিষ্ঠ্য আত্মীয়-স্বজন যদি বিদেশে থাকে, বিশেষ করে ইউরোপিয়ান কোনও দেশে থাকে, তবে আপনার জন্যে এটা কোন সমস্যাই নয়। কারণ, আপনি অনায়াসেই আপনার বন্ধুর কিংবা আত্মীয়ের পে-পাল অ্যাকাউন্ট ইউজ করতে পারেন। অর্থাৎ, এই ওয়েবসাইটগুলোতে লিখে আপনি পেমেন্ট নেবেন আপনার বন্ধুর পে-পালে। আর বন্ধুকে বলবেন আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিতে কিংবা দেশে থাকা অন্য কারো মাধ্যমে আপনাকে ক্যাশ পে করে দিতে।
যদি আপনার এরকম কোনও বন্ধু বা আত্মীয় না থাকে এবং আপনি এসব ঝামেলায় যেতে না চান, তবে আপনার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত হচ্ছে আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটে কাজ করা। সুতরাং, দেখে নিন যে-সব আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটে আর্টিকেল রাইটিং এর চাকরি পাবেন-
আপওয়ার্ক: আপওয়ার্কে আর্টিকেল রাইটার কিংবা ব্লগ পোস্ট রাইটার কিংবা প্রোডাক্ট রিভিউ রাইটার চেয়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়। পারসোনাল ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইটের মালিক এবং ই-কমার্স কিংবা প্রোডাক্ট সেলিং কোম্পানীগুলোর জন্য প্রতিনিয়তই আর্টিকেল রাইটারের প্রয়োজন হয়।
নীল লেখাটার ওপর ক্লিক করে দেখে নিন আপওয়ার্কে কী পরিমাণ আর্টিকেল রাইটিং এর কাজ রয়েছে। এটা আপওয়ার্ক ওয়েবসাইটের ব্লগ রাইটিং ক্যাটেগরির লিংক যা প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। অর্থাৎ, আপনি যেদিনই এই লিংকে যাবেন, সেদিনেরই আপডেট জব পোস্টিংগুলো দেখতে পাবেন। দেখতে পাবেন পুরনো পোস্টগুলোও। এখানকার যে কোনও রাইটিং জব পোস্টেই আপনি বিড করতে পারবেন।
বিড করার আগে আপনার প্রয়োজন হবে এখানে একটি ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট খুলে নেয়া। সুতরাং, আগে জেনে নিন আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলবেন কীভাবে আর কিভাবে সাজাবেন একটি সুন্দর প্রোফাইল। অবশ্য আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট অ্যাপ্রুব করা এখন অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের, বিশেষ করে যারা আপওয়ার্কে দেদারসে কাজ করছে, তাদের পরামর্শ নিন। এছাড়া আরো যে সব সাইটে আর্টকেল রাইটিং এর চাকরি পাবেন, সেগুলো হল- Craiglist, Peopleperhour, Freelancer। সাইটের নামের উপর ক্লিক করে দেখে নিন চাকরির ধরণ, আর শুরু করে দিন আর্টিকেল রাইটিং ফ্রি-ল্যান্স জব।
সোশাল মিডিয়া ম্যানেজার: একটা কোম্পানীর সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ম্যানেজ করা আবার সেই সাথে ইনকামও করা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সত্যিই দারুণ একটা সুযোগ। এটা বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা সম্পর্কে জানা, অভিজ্ঞতা অর্জণ করারও একটা দারুণ উপায়। প্রত্যেকটা কোম্পানীরই এখন বিভিন্ন সোশাল সাইটে অ্যাকাউন্ট থাকে, কোম্পানীর নামে পেজ থাকে। আপনার কাজ হবে এ-সব কোম্পানীর সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট কিংবা পেজ দেখা-শুনা করা, কোম্পানীর হয়ে পোস্ট দেয়া, প্রমোশনের জন্য নতুন নতুন প্ল্যান করা, ইত্যাদি।
বিজনেস ইনসাইডার, পে-পাল ও পাইওনিয়ারের এক যৌথ জরিপের ফলাফল থেকে জানা গিয়েছে যে, ২০১৭ সালে ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বিজনেস হয়েছে অনলাইনে। আর এই পরিমাণটা ২০১৮ সালে গিয়ে পৌঁছেছে ৩.৮ ট্রিলিয়নে। বুঝতেই পারছেন গ্লোবাল বিজনেসের প্রায় পুরোটাই চলে যাচ্ছে অনলাইনে। বিশেষ করে, প্রোডাক্ট সেলিং কোম্পানীগুলোর জন্যে এখন আর অনলাইনের বিকল্প নাই।
কাজেই, এসব কোম্পানীর জন্যে সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি কতটা জরুরী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এসব কোম্পানীর জন্যেই প্রয়োজন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট বা অ্যানালিস্ট। একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার প্রতি ঘন্টায় আয় করেন ১২৬০ টাকা থেকে ৩৩৬০ টাকা। আর তার কাজ হচ্ছে কিছু সাধারণ কাজ করা।
যেমন, কোম্পানীর ফেসবুক পেজ, টুইটার অ্যাকাউন্ট, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, ইউটিউবসহ যাবতীয় সব সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট দেখাশুনা করা। এসব অ্যাকাউন্ট বা পেজে নিয়মিত পোস্ট দিয়ে ফলোয়ারদের অ্যাক্টিভ রাখা, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া। কী, পড়াশুনার পাশাপাশি এই সাধারণ কাজগুলো করতে পারবেন না? নিশ্চয়ই পারবেন। তাহলে দেখে নিন, সোশাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে চাকরি পাবেন যে সব সাইটে- আপওয়ার্ক, ইন্ডিড, মনস্টার, ক্যারিয়ার বিল্ডার, নকরি।
ডাটা এন্ট্রি: ডাটা এন্ট্রি ক্লাক হিসেবে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে অহরহ। অসংখ্য কোম্পানী তাদের ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। পড়াশুনার পাশাপাশি ডাটা এন্ট্রির কাজ করে আপনি আয় করতে পারেন ঘন্টায় ৯ থেকে ১৬ ডলার। ডাটা এন্ট্রি কি? সহজ ভাষায়, ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে কম্পিউটারে কিংবা যে কোন ইলেকট্রোনিক্স ডিভাইসে কিছু স্পেসিফিক ডাটা এন্ট্রি করা।
হতে পারে, কোন সফট্ওয়্যারে কিংবা কোন ওয়েবসাইটে সুনির্দিষ্ট কিছু ডাটা এন্ট্রি দেয়া। এসব কাজ সাধারণত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বা এক্সপার্টরা করে থাকে যাদের ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে ভাল ধারণা রয়েছে। কিছু সফটওয়্যার কোম্পানী কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রায়ই তাদের ডাটা আপডেট দিতে হয়। কখনো কখনো ডাটার ফরমেট পরিবর্তণ করতে হয়। আবার কখনো এক স্থান থেকে ডাটা নিয়ে অন্য স্থানে জমা করতে হয়। তখন তারা এই কাজগুলোর জন্যে কিছু লোকজন হায়ার করে থাকেন।
আপনিও হতে পারেন, তাদের একজন। না, এটাকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। ডাটা এন্ট্রি কাজ থেকে আপনি প্রতি মাসে আয় করতে পারেন ৩ লাখ ২ হাজার ৪শ টাকা। আর যদি টিম নিয়ে কাজ করেন, তো এই অ্যামাউন্টটা আরো অনেক বাড়তে পারে। যে সব সাইটে ডাটা এন্ট্রির কাজ পাবেন- আপওয়ার্ক, পিপল পার আওয়ার, গুরু।
রিজিউম রাইটার: পড়াশুনা শেষ করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা নেয়ার কথা ভাবছেন এমন মানুষদের রিজিউম লিখে দেয়ার কাজটি করে দিয়ে আয় করতে পারেন আপনি ছাত্রাবস্থাতেই। ভাবছেন এ সামান্য কাজের জন্য কেউ আবার কাউকে হায়ার করে নাকি! এটা তো সবাই নিজেই করে নেয়!
তাহলে দেখুন, রিজিউম লেখার কী পরিমাণ কাজ রয়েছে অনলাইন মার্কেটে- আপওয়ার্কে রিজিউম রাইটিং জব, ইন্ডিডে রিজিউম রাইটিং জব।এছাড়া শুধু রিজিউম রাইটিং নিয়েই গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ওয়েবসাইট। দেখুন সেগুলোর তালিকা- রিজিউম রাইটিং গ্রুপ, রিজিউম স্লাস ভেগাস, বেস্ট টেন রিজিউম রাইটার্স
ইউটিউব এক্সপার্ট: আপনি যদি ইউটিউব এক্সপার্ট হন, আপনার যদি থাকে ভিডিও মার্কেটিং দক্ষতা কিংবা আপনার মাথায় যদি থাকে দারুণ দারুণ ভিডিও মেকিং আইডিয়া কিংবা আপনি যদি হয়ে থাকেন একজন ভিডিও এডিটর, তাহলে আপনার জন্যও রয়েছে অনলাইন জব। বিভিন্ন কোম্পানী তাদের ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনার জন্য লোক খুঁজছে। আপনিও হতে পারেন তাদের একজন আর আয় করতে পারেন ঘরে বসে।
ইউটিউব জব পাবেন যেখানে- ইন্ডিডে ইউটিউব জব, আপওয়ার্কে ইউটিউব জব, গ্লাসডোরে ইউটিউব জব। বিশ্ব জুড়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ছাত্রাবস্থায় চাকরি করে তাদের পড়াশুনার খরচসহ অন্যান্য অনেক প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। পড়াশুনার বাইরে যে সময়টুকু পাওয়া যায় তা আড্ডায় না কাটিয়ে কাজে লাগিয়ে দিন।
উপরে যে কয়টি চাকরি বা কাজের কথা বলা হয়েছে, এর বাইরেও আরো অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। আউটসোর্সিং এর জন্য সেরা সেরা অনেক সাইট রয়েছে, যেগুলোতে নানা ধরণের কাজ পাওয়া যায় যা পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে করে ফেলা যায় অনায়াসে। সুতরাং আর সময় নষ্ট না করে আজই শুরু করে দিন। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
1 thought on “ছাত্রাবস্থায় পড়াশুনার ফাঁকে যে ৫টি কাজ করতে পারেন!”