প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ

পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া মহা যুদ্ধ গুলির মধ্যে অন্যতম হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশই কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিল। এই যুদ্ধে বহু দেশের বহু ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং প্রাণ হারায় বহু সৈনিক। এই মহা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ২৮ শে জুলাই এবং শেষ হয়েছিল ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ১১ ই নভেম্বর। প্রায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই যুদ্ধ চলেছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ কূটনৈতিক ব্যর্থতা, পারস্পারিক সন্দেহ ও জোট গঠন, সাম্রাজ্যবাদ, সমরবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি চিহ্নিত করেন গবেষকরা , কিন্তু এখনো এটি একটি বিতর্কিত বিষয় ।

 

সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বন্দ্ব:  শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীকালে ইউরোপের বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশ শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য এবং উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বিক্রির জন্য ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের দিকে জোর দেয়। অনেক আগে থেকেই ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে রেখেছিল। পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশগুলি বিশেষ করে জার্মানি ও ইতালি উপনিবেশ স্থাপনের প্রতিযোগিতায় নামলে ওই দেশগুলির সঙ্গে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। যা ধীরে ধীরে এক যুদ্ধের দিকের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে থাকে।

 

সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগীতা:  ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকায় যুদ্ধের আশঙ্কায় দেশগুলি নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। এবং সেইসঙ্গে সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকা দেশগুলি দ্বারা দুটি পরস্পর বিরোধী শক্তি জোট গঠিত হয়। এক পক্ষে থাকে জার্মানি, ইতালি ও অস্ট্রিয়া এবং অপর পক্ষে থাকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া। ফলে এক মহাযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

 

উগ্র জাতীয়তাবাদ:  সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের দেশ গুলিতে সেই সময় উগ্র ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ সংঘাতও যুক্ত হয়। এই উগ্র জাতীয়তাবাদই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। এই জাতিগত দ্বন্দ্ব প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পথকে অনেকটাই প্রশস্ত করে তোলে।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ:  বিশ্লেষকদের মতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ হলো- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ২৮শে জুন অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী যুবরাজ আর্চ ডিউক ফার্দিনান্দ ও তার স্ত্রী সোফি বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো নগরে বেড়াতে যান। সেখানে এক আততায়ীর হাতে যুবরাজ ও তার স্ত্রী নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড’ নামেও পরিচিত। অস্ট্রিয়া তাদের যুবরাজের হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার কাছে কয়েকটি অসম্ভব দাবি করে বসে। সার্বিয়া সেই দাবিগুলি যথাযথ পূরণ না করায় অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধে জার্মানি অষ্ট্রিয়ার পক্ষে যোগ দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া সার্বিয়ার পক্ষে যোগ দেয়। এর ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।