ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো বা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো দোস সান্তোস আভেইরো (Cristiano Ronaldo dos Santos Aveiro)। ইনি একজন পর্তুগিজ পেশাদার ফুটবলার, যিনি প্রিমিয়ার লীগ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং পর্তুগাল জাতীয় দলে ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে রোনালদো পাঁচটি বালোঁ দর এবং চারটি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শো অর্জন করেছেন, যা কোন ইউরোপীয় খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড সংখ্যক জয়। কর্মজীবনে তিনি ৩২টি প্রধান সারির শিরোপা জয় করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে সাতটি লীগ শিরোপা, পাঁচটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ, একটি উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, এবং একটি উয়েফা নেশনস লীগ শিরোপা। রোনালদোর চ্যাম্পিয়নস লীগে সর্বাধিক ১৩৪টি গোল এবং ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বাধিক ১২টি গোলের রেকর্ড রয়েছে।তিনি অল্পসংখ্যক খেলোয়াড়দের একজন যিনি ১,১০০টির উপর পেশাদার খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার ক্লাব ও দেশের হয়ে ৭৯০টির বেশি গোল করেছেন। তিনি ১০০টি আন্তর্জাতিক গোল করা দ্বিতীয় পুরুষ ফুটবলার এবং প্রথম ইউরোপীয়।
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো এর ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম: ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো দোস সান্তোস আভেইরো
জন্ম: ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ (বয়স ৩৬)
জন্ম স্থান: ফুঞ্চাল, মাদেইরা, পর্তুগাল (Funchal, Madeira, Portugal)
উচ্চতা: ১.৮৭ মি. (৬ ফু ২ ইঞ্চি)
মাঠে অবস্থান: আক্রমণভাগের খেলোয়াড় (Forward)
জীবনী
পর্তুগালের মাদেইরাতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জোসে দিনিস আভেইরো ও মা মারিয়া ডোলোরেস দস সান্তোস আভেইরো। বড় ভাই হুগো এবং বড় দুই বোন এলমা ও কাতিয়ার সাথে তিনি বেড়ে উঠেছেন। কাতিয়া পর্তুগালের একজন গায়িকা। মঞ্চে তিনি “পেনাল্ডো” নামে গান করেন। তার মার পরিবারের নাম দস্ সান্তোস এবং বাবার পরিবারের নাম আভেইরো।রোনাল্ডো নামটি পর্তুগালে সচরাচর দেখা যায় না; তার বাবা-মা মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগানের সাথে মিলিয়ে এ নাম রাখেন।
মাদেইরার ফুঞ্চালে জন্মগ্রহণ করে বেড়ে ওঠেন রোনালদো । তিনি তার যুব ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং ন্যাশিওনালে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি ২ বছর খেলেন।তিনি ১৯৯৭ সালে পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং সিপিতে আসেন এবং সেখানে ২০০২ সালে তার প্রাপ্তবয়স্ক ক্লাব কর্মজীবন শুরু করেন। যিনি তাকে ২০০৩ সালে £১২.২৪ মিলিয়নের (€১৫ মিলিয়ন) বিনিময়ে ইউনাইটেডে নিয়ে আসে। ২০০৪ সালে রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে প্রথম শিরোপা এফএ কাপ জেতেন এবং দলটিকে টানা তিনটি প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা, একটি চ্যাম্পিয়নস লীগ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতাতে সাহায্য করেন। ২৩ বছর বয়সে তিনি তার প্রথম বালোঁ দর অর্জন করেন। রোনালদো ইংল্যান্ডে খেলা প্রথম খেলোয়াড় যিনি প্রধান ৪টি পিএফএ এবং এফডব্লিউএ পুরস্কার জিতেছেন, যা তিনি ২০০৭ সালে করেছেন।২০০৮ সালে তিনি ৪টি প্রধান পিএফএ এবং এফডব্লিউএ ট্রফির মধ্যে ৩টি জেতেন এবং ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার, ফিফপ্রো প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার, ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার এবং ওনজে দ’অর অ্যাওয়ার্ড জেতেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে রোনালদোকে এফডব্লিউএ প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ তাকে £৮০ মিলিয়নের (€৯৪ মিলিয়ন/$১৩১.৬ মিলিয়ন) বিনিময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে তাদের দলে নিয়ে আসে, যার ফলে রোনালদো সেইসময় ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ের সম্মান পান। রোনালদো ২০০৯ সালে সেরা গোলের জন্য প্রথম পুস্কাস অ্যাওয়ার্ড জেতেন। তিনি ২০০৮ ও ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পুরস্কার অর্জন করেন। মাদ্রিদে তিনি মোট ১৫টি শিরোপা জেতেন, তার মধ্যে রয়েছে দুটি লা লিগা শিরোপা, দুটি কোপা দেল রে, ও চারটি চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা, এবং তিনি এই ক্লাবের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। মাদ্রিদে যোগদানের পর তিনি বালোঁ দরের দৌড়ে তিনবার তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির কাছে পরাজিত হয়ে রানার-আপ হন এবং ২০১৩-২০১৪ সালে টানা দুবার ও ২০১৬-২০১৭ সালে আবারও টানা দুবার বালোঁ দর অর্জন করেন। তিনিই একমাত্র পর্তুগিজ যিনি ৫ বার এই পুরস্কার জিতেছেন।২০১৮ সালের টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫টি চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জয় করেন। ২০১৮ সালে তিনি প্রারম্ভিক €১০০ মিলিয়নের (£৮৮ মিলিয়ন) ট্রান্সফার ফিতে ইয়ুভেন্তুসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন, যা কোন ইতালীয় ক্লাবের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক এবং ত্রিশোর্ধ্ব কোন খেলোয়াড়ের জন্য সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক। ইয়ুভেন্তুসে তিনি প্রথম তিনি মৌসুমেই দুটি সেরিয়ে আ শিরোপা, দুটি সুপারকোপা ইতালিয়ানা, ও একটি কোপা ইতালিয়া জয় করেন।রোনালদো শীর্ষ ইউরোপিয়ান লীগগুলোর মধ্যে প্রথম খেলোয়াড় যিনি পর পর দুই মৌসুমে ৪০ গোল করেছেন, রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ লীগ গোল করেছেন এবং তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি লা লিগায় প্রত্যেক দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন।এছাড়াও তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল ও লা লিগায় মিনিট প্রতি সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডের অধিকারী। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তার ৩০০তম ক্লাব গোল পূর্ণ করেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তার ক্যারিয়ারের ৪০০তম গোল করেন। এছাড়া তিনি ২০১৭ সালে ক্যারিয়ারের ৬০০ তম গোল করেন। রোনালদো বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০০ গোল করার রেকর্ড গড়েন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা ১১ ম্যাচে গোল করেন। এছাড়া তিনি এই আসরে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ড গড়েন এবং ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন যা আরেকটি রেকর্ড।রোনালদো পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে খেলেন, ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে কাজাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার অভিষেক ঘটে। তিনি জাতীয় দলের হয়ে ১০০ এর অধিক ম্যাচ খেলেছেন এবং তিনি পর্তুগালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের অধিকারী। তিনি পর্তুগালের হয়ে প্রধান ৫টি টুর্নামেন্ট; ২০০৪ উয়েফা ইউরো, ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০০৮ উয়েফা ইউরো, ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০১২ উয়েফা ইউরোতে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০০৪ সালের উয়েফা ইউরোর প্রথম খেলায়, গ্রিসের বিরুদ্ধে তিনি তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পর্তুগালের অধিনায়ক হন এবং ২০১২ সালের উয়েফা ইউরোতে অধিনায়ক হিসেবে দলকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যান এবং প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোল করেন।
তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ঐতিহ্যবাহী ৭নং জার্সি পড়ে খেলতেন, যা পূর্বে জর্জ বেস্ট, এরিক কাঁতোয়াঁ এবং ডেভিড বেকহ্যামের মত তারকারা পড়তেন। রিয়াল মাদ্রিদে প্রথম বছর তিনি ৯ নং জার্সি নিয়ে খেলেন। রিয়াল মাদ্রিদ লিজেন্ড রাউলের ক্লাব ছাড়ার পর রোনালদো ৭ নং জার্সি লাভ করেন।