জগদানন্দ রায় (১৮৬৯-১৯৩৩) : নদিয়া জেলার অন্তর্গত কৃয়নগরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা অভয়ানন্দ রায়। গড়াই-এর মিশনারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে কর্মজীবন শুরুকরেন জগদানন্দ। বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ রচনার হাতেখড়ি ছাত্রাবস্থাতেই। সাধনা পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রবন্ধের সুত্র ধরেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচিতি।
তিনি রবীন্দ্রসান্নিধ্যে আসার পর প্রথমে শিলাইদহ জমিদারির কর্মচারী, ক্রমে রবীন্দ্রনাথের পুত্রকন্যাদের বিজ্ঞান ও গণিতের গৃহশিক্ষক এবং ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শিক্ষক নিযুক্ত হন। তিনিই শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের প্রথম সর্বাধ্যক্ষ। বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগেও তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের সত্যপ্রচারের ক্ষেত্রে তিনি রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আদর্শের অনুসারী ছিলেন। ১৩৩০ বঙ্গাব্দে নৈহাটিতে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের বিজ্ঞান শাখার সভাপতি ছিলেন জগদানন্দ রায়। তার লেখা বইগুলির মধ্যে রয়েছে – ‘গ্রহনক্ষত্র’, প্রাকৃতিকী, “বৈজ্ঞানিকী’, ‘পােকামাকড়”, ‘জগদীশচন্দ্রের আবিষ্কার, বাংলার প্রার্থী, “শব্দ ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পর্কে বলেছেন – ‘আমার প্রয়ােজন ছিল এমন সব লােক যাঁরা সেবাধর্ম গ্রহণ করে এই কাজে (শিক্ষকতা) নামতে পারবেন, ছাত্রদেরকে আয়মীয়জ্ঞানে নিজেদের শ্রেষ্ঠ দান দিতে পারবেন। বলা বাহুল্য, এ রকম মানুষ সহজে মেলে না। জগদানন্দ ছিলেন সেই শ্রেণির লােক। জগদানন্দের কৃতিত্ব এখানেই যে, জ্ঞানের ভােজে এ দেশে তিনিই সব প্রথমে কাচা বয়সের পিপাসুদের কাছে বিজ্ঞানের সহজ পথ্য পরিবেশন করেছিলেন।