মাইকেল জ্যাকসন এর জীবন কাহিনী । Michael Jackson

মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন (Michael Joseph Jackson) (আগস্ট ২৯, ১৯৫৮– জুন ২৫, ২০০৯) একজন আমেরিকান সঙ্গীতজ্ঞ, নৃত্যশিল্পী, গীতিকার, অভিনেতা, সমাজকর্মী এবং ব্যবসায়ী।তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক বিক্রিত  সঙ্গীত শিল্পীদের একজন। জ্যাকসন পরিবারের ৮ তম সন্তান মাইকেল, ১৯৬৩ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে একজন পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর তিনি জ্যাকসন ফাইভ নামে একটি মিউজিক্যাল গ্রুপের সদস্য হিসেবে গান করেন।১৯৭১ সাল থেকে মাইকেল একক শিল্পী হিসাবে গান গাইতে শুরু করেন। মাইকেলের গাওয়া পাঁচটি মিউজিক অ্যালবাম বিশ্বের সেরা বিক্রির রেকর্ড করেছে, যেমন   –   অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টরি (১৯৯৫)। তাকে পপ রাজা (King of Pop) বা সংক্ষেপে এমজে (Mj) বলা হয়।সঙ্গীত, নৃত্য এবং ফ্যাশনের জগত সহ তার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে তিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিত্ব হয়ে আছেন।

 

প্রাথমিক তথ্য

জন্ম নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসান
জন্ম ২৯ আগস্ট ১৯৫৮
গ্যারে, ইন্ডিয়ানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যু ২৫ জুন ২০০৯ (বয়স ৫০)
লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ধরন পপ, রক, নিউ জ্যাক সুয়িং মিউজিক, সউল মিউজিক
পেশা সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, সঙ্গীত প্রযোজক, অভিনেতা, মডেল, নৃত্য শিল্পী, ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক।

 

মাইকেল ১৯৮০ এর দশকে সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান সঙ্গীতশিল্পী যিনি এমটিভিতে এত জনপ্রিয়। এমটিভিতে তার গাওয়া গানটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।গানের তালে মাইকেলের নাচের কৌশলও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মাইকেলের জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রয়েছে রোবট এবং মুনওয়াক। মুনওয়াক আসলে পিছনের দিকে হাঁটার ভঙ্গি, যা সামনের দিকে হাঁটার বিভ্রম তৈরি করে। তিনি পপ মিউজিক এবং মিউজিক ভিডিওর ধারণা পরিবর্তন করেছেন এখন সারা বিশ্বের নৃত্যশিল্পীরা প্রায়ই মাইকেল জ্যাকসনকে শ্রদ্ধা জানায়।মাইকেল জ্যাকসন দু’বার রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেইমে নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনিই এই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যিনি গান লেখক,নাচের (সর্বপ্রথম এবং একমাত্র),”আর এন বি” হল অফ ফেইমে যায়গা করে নিয়েছেন। সঙ্গীত জগতের কেউ এত ক্যাটাগরিতে হল অফ ফেইমে নিজেকে নিতে পারেন নি।  গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস মাইকেল সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী – ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার, ১৩টি ১ একক এবং ৩৫ কোটিরও (৩৫০ মিলিয়ন) বেশি মাইকেলের অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে৷ “থ্রিলার” (১৮৮২) ১১০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি করেছে, এটিকে সর্বকালের সেরা বিক্রিত অ্যালবাম বানিয়েছে। “ব্যাড” (১৯৮২), যার ৫টি গান আছে বিলবোর্ড চার্টে নম্বর ১এ, মাইকেল জ্যাকসনের সর্বকালের দ্বিতীয় সেরা বিক্রিত অ্যালবাম এবং ৬৭মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় । “ডেঞ্জারাস”(১৯৯১) যার মাধ্যমে মাইকেল “নিউ জ্যাক সুইং” নামে নতুন একটা জেনার কে পপুলার করে,এবং এটি সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হওয়া নিউ জ্যাক সুইং এলাবাম, যার পরিমাণ ৩৬ মিলিয়ন কপি।”হিস্টোরি”(১৯৯৫) মাইকেলের নবম স্টুডিও এলবাম এবং এই পর্যন্ত ৩৩ মিলিয়ন(৬৬ মিলিয়ন ইউনিট), যা হচ্ছে এই পর্যন্ত ২ টি ডিস্ক সমন্বিত একটি এলবাম এর সবচেয়ে বেশি বিক্রিত এলবাম। হিস্টোরি একটি বহুল আলোচিত প্রতিবাদি এলবাম। তার ২ বছর পর ১৯৯৭ সালে তিনি রিলিজ করেন তার সর্বপ্রথম রিমিক্স এলবাম “ব্লাড অন দা ডান্স ফ্লোর:হিস্টোরি ইন দা মিক্স” যা এই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হওয়া রিমিক্স এলবাম(৬ মিলিয়ন কপি)। ২০০১ সালে মাইকেল রিলিজ করে “ইনভিন্সিবল”, তার জিবনের ১০ম ও সর্বশেষ স্টুডিও এলবাম।এটি থ্রিলার এর থেকেও তাড়াতাড়ি বিক্রি হচ্ছিল,কিন্তু “সনি মিউজিক ” এর সাথে সমস্যার কারণে তারা এই এলবামটি প্রোমোট না করে , তার পরেও এটি ১৩ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। এটি এই পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যায়বহুল এলবাম, এই এলবাম এর শুধুমাত্র রেকর্ডিং এই মাইকেল খরচ করে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপর। ২০১০ সালে বিলবোর্ড কর্তৃক একটি পোলে এই এলবামটি ২০০০-২০১০ সালের মধ্যে রিলিজ পাওয়া এলবাম এর সেরা এলবাম নির্বাচিত হয়। জ্যাকসন হচ্ছে এই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এওয়ার্ড ও নোমিনেশন পাওয়া তারকা।ব্যক্তিগত জীবনে নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লেও প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত ছিলেন । তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গায়ক ও নৃত্যশিল্পীর সিংহাসনে বসে আছেন। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আজকের বিশ্বে তার মতো তারকা নেই।

 

২৫শে জুন ২০০৯ সালে মাইকেল জ্যাকসন মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল।যখন TMZ তার ওয়েবসাইটে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে, তখন তা দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।তার মৃত্যু বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছিল।সারা বিশ্বের ভক্ত ও সাধারণ মানুষ তার সম্পর্কে তথ্যের জন্য গুগলে অনুসন্ধান শুরু করে।”Michael Jackson” শব্দটি এত বেশি(মিলিয়ন মিলিয়ন) ইনপুট হবার কারণে তারা ভেবেই বসে DDoS Virus এ তাদের সার্চ ইঞ্জিন আক্রান্ত হয়েছে যার ফলে তারা প্রায় ৩০ মিনিট গুগল বন্ধ রাখে।এক ঘণ্টারও কম সময়ে, ১২ লাখেরও বেশি মানুষ উইকিপিডিয়ায় মাইকেলের জীবনী দেখে আর এই চাপের কারণে উইকিপিডিয়া বিপর্যস্ত হয়েছে (পরে কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের ইতিহাসে এরকম ঘটনা এই প্রথম)।  এভাবেই টুইটার  ক্র্যাশ হয়

 

দায়িত্বে খামখেয়ালি করার কারণে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী মার্কিন চিকিৎসক ডঃ কনরাড মারেকে ৪ বছরের জন্য কারাবাস সাজা দেয়া হয়েছিল।