সত্যজিৎ রায় এর জীবনী । Satyajit Ray

সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) (২ মে ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল ১৯৯২) ভারতীয়  শিল্প নির্দেশক, চিত্রনাট্যকার, সংগীত পরিচালক, চলচ্চিত্র নির্মাতা , এবং একজন লেখক ছিলেন ।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

নাম ((Name)) সত্যজিৎ রায়
ইংলিশ নাম (English Name) Satyajit Ray
ছদ্মনাম (Nick Name)  God , Manik
জন্ম (Birth) ২ মে ১৯২১ সাল
জন্ম স্থান (Birth Place) কলকাতা শহরে
বাবার নাম (Father Name) সুকুমার রায় (Sukumar Ray)
মায়ের নাম (Mother Name) সুপ্রভা রায় (Suprabha Ray)
ভাষা বাংলা (Bengali)
পড়াশোনা (Educatriuon) প্রেসিডেন্সি কলেজে,  বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
কর্মজীবন (Occupations) চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্র প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, লিপিকলাবিদ, অঙ্কনশিল্পী, লেখক
স্ত্রী /  স্বামী (Wife/ Husband) বিজয়া রায় (Bijoya Ray)
সন্তান (Childrens) সন্দীপ রায় (Sandip Ray)
ধর্ম (Religion) হিন্দু
জাতীয়তা (Nationality) ভারতীয়
মৃত্যু (Death) ২৩ এপ্রিল ১৯৯২
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি ()
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার (Prize)  দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৪), বেসামরিক পুরস্কার ভারত রত্ন (১৯৯২), ন্যাশনাল অর্ডার অব দ্য লেজিওঁ অফ অনারের (১৯৮৭), আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন ।
জীবন কাল (Age) বয়স ৭০

সত্যজিৎ রায়ের জন্মঃ 

এই মহান ব্যক্তির জন্ম হয় ২রা মে ১৯২১ সালে, কোলকাতা শহরে | তার পিতা ছিলেন সুকুমার রায় এবং মা ছিলেন সুপ্রভা রায় ।সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন বিখ্যাত লেখক ও  চিত্রকর।ভারত সেই সময় ব্রিটিশ শাসনত্বের অধীনে ছিল । তাঁর বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন তাঁর বাবা সুকুমার রায় মারা যান, তখন তাঁকে সুপ্রভা দেবী অনেক কষ্টে বড় করেন।

 

সত্যজিৎ রায়ের শিক্ষা জীবনঃ

তাঁর শিক্ষা জীবন কিন্তু শুরু হয় ১৯২৯ সাল থেকে এবং তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ৮ বছর । প্রথমে ভর্তি হন বালিগঞ্জ গভর্মেন্ট হাইস্কুলে এবং তারপর স্কুলের পড়া শেষ করে, ভর্তি হন কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে | সেখানে তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন এবং ১৯৪০ সালে সত্যজিতের মা তাঁকে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য জ্রোর করতে থাকেন এবং শেষে মায়ের ইচ্ছার জন্যই তিনি সেখানে ভর্তি হন | শান্তিনিকেতনে গিয়ে সত্যজিৎ প্রাচ্যের শিল্পের মর্যাদা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন।পরে তিনি নিজেই স্বীকার করেন,  বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু এবং বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেতে পেরেছিলেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বেশিদিন পড়াশোনা করেননি |

সত্যজিৎ রায়ের কর্মজীবনঃ 

১৯৪৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং সেখানে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে “জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার” হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। এই ভাবে কাজ করতে করতে তিনি ফিল্ম জগতে সর্ট হিসেবে কাজ পাইতেন | ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পরে তিনি নিজেই একটি ফিল্ম সোসাইটি তৈরি করেন ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি নামে । এরপর ১৯৪৯ সালে ফরাসি চলচ্চিত্রকার জঁ রেনোর তাঁর “দ্য রিভার” ছবি নির্মাণের জন্য কলকাতায় আসেন | তখন সত্যজিৎকেই তিনি তাঁর সিনেমার উপযোগী স্থান খোঁজার জন্য সহকারী হিসাবে খুঁজে নিয়েছিলেন | ১৯৪৯ সালেই সত্যজিৎ রায় তাঁর দূরসম্পর্কের, বহু দিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন | বিজয়া দেবীই ছিলেন একমাত্র নারী যাঁকে সত্যজিৎ রায় নিজের প্রিয় বন্ধু ও তাঁর তৈরী সিনামার সবচেয়ে বড় সমালোচক বলে মনে করতেন | এরপর সত্যজিৎ রায় অবশেষে একদিন সিনেমা তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেন |

সত্যজিৎ রায়ের চিত্রজগতের জীবনীঃ 

ইতালীয় নতুন বাস্তবতাবাদী ছবি “লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে” অর্থাৎ ইংরেজিতে Bicycle Thieves (সাইকেল চোর) নামক একটি সিনেমা, তাঁকে পথের পাঁচালী তৈরী করতে ভীষন ভাবে উদ্বুদ্ধ করে | সেই সময়ে প্রায় দশ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি “পথের পাঁচালী” গল্পের সত্ত্ব কিনে ফেলেন সিনেমা তৈরীর জন্য, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধবা স্ত্রী রমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে | আর তারপর সিনামা তৈরীর কাজ শুরু করে দেন |১৯৫৫ সালের ২৬শে অগাস্ট কোলকাতার সমস্ত সিনেমা থিয়েটারে মুক্তি পায় এই ছবিটি | এই ছবিটি দর্শক-সমালোচক সবার প্রশংসা লাভ করে এবং ছবিটি বহু দিন ধরে ভারতের এবং ভারতের বাইরে প্রদর্শিত হয় । তার পরবর্তী ছবি “অপরাজিত” ছবির সাফল্য তাঁকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও পরিচিত করে তোলে।এই সিনেমাটি পরে ভেনিস শহরে আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবে “গোল্ডেন লায়ন” পুরস্কারে সম্মানিত হয় যেটি ছিলো সেখানকার সিনেমা জগতের একটি সর্বোচ্চ পুরস্কার |

অন্যান্য জনপ্রিয় সিনেমাগুলি নামঃ

পরশপাথর(১৯৫৮), জলসাঘর(১৯৫৮), অপুর সংসার(১৯৫৯), তিন কন্যা(১৯৬১), চারুলতা(১৯৬৪),গুপি গাইন বাঘা বাইন(১৯৬৯), সোনার কেল্লা(১৯৭৪), জয় বাবা ফেলুনাথ(১৯৭৯) , হীরক রাজার দেশে(১৯৮০), শাখা প্রশাখা(১৯৯০)

সত্যজিৎ রায় কিন্তু শুধু একজন চলচ্চিত্রকর ছিলেন না | তিনি কিন্তু একজন ভালো সাহিত্যিকও ছিলেন | তাঁর সৃষ্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল- গোয়েন্দা ফেলুদা, মহান বিজ্ঞানী শ্রী ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু ও তারিণী খুঁড়ো । এবং তিনি একজন সঙ্গীতকারও ছিলেন |

সত্যজিৎ রায়ের উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলি (Achievements)

১৯৫৮ সাল: পদ্মশ্রী পুরস্কার

১৯৫৯ সাল: সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কার

১৯৬৫ সাল: পদ্ম ভূষণ পুরস্কার

১৯৭১ সাল: স্টার অফ যুগোস্লাভিয়া পুরস্কার

১৯৭৬ সাল: পদ্ম বিভূষণ পুরস্কার

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দেশি দেশিকোত্তম পুরস্কার

১৯৭৮ সাল: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডক্টর অফ লেটারস পুরস্কার

১৯৮১ সাল: বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডক্টরেট ডিগ্রী পান

১৯৮২ সাল: গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার, বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার

১৯৮৪ সাল: দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার

১৯৮৭ সাল: দাদাভাই নওরোজী স্মৃতি পুরস্কার

১৯৮৭ সাল: কমান্ডার অফ দ্য লিজিয়ন অফ অনার পুরস্কার

১৯৯১ সাল: অস্কার পুরস্কার (পথের পাঁচালী সিনেমার জন্য)

১৯৯২ সাল: আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার, ভারতরত্ন পুরস্কার

সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যুঃ

২৩ এপ্রিল ১৯৯২ সালে (৭০ বয়সে) বাংলা তথা ভারতের এই মহান চলচ্চিত্রকরের অবশেষে মৃত্যু হয় | ভারতীয় সিনেমা সেই সময় বিশ্ব দরবারে এক অনন্য মর্যাদা পায় | তিনি গোটা ভারতের একজন বিশিষ্ট বাক্তি ছিলেন ।